অণু গল্প- প্রতীক্ষা

প্রতীক্ষা
অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ)

 

 

তুমি তো বললে ফিরে আসবে? কেন এলে না? বলো বলো কেন ফিরলে না?
আমার সব অপরাধ । কেন পারলে না ক্ষমা করে দিতে। সত্যি বলছি এবার থেকে যা বলবে সব কথা শুনবো। সব কাজ করব। তুমি শুধু ফিরে এসো।
ডেডবডির সামনে হাঁফুস নয়নে কেঁদে ফেলল জিত। চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে।
এক একসপ্তাহ চুপটি করে ছিল। একফোঁটা ও কাঁদে নি। কেন এলে না ফিরে? উত্তর দাও মা? উত্তর দাও?
চিৎকার করে কেঁদে ফেলল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলে।
মায়ের ডেডবডির সামনে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে। বাথরুমে গিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে অবাধ্য ছেলেকে ভয় দেখতে চেয়ে ছিল।
ছুটির দিনে দুপুর বেলায় ছেলেকে বাড়ি থাকতে বলে ছিল।মায়ের কথা না শুনে বেরিয়ে যাচ্ছিল কিছু বাজে ছেলের সঙ্গে আড্ডা দিতে।
তাই ছেলেকে ঘরে ফেরাতে এমন পদক্ষেপ নেবে,ছেলে ভাবতেও পারে নি। বাড়িতে আর কেউ ছিল না। ছেলে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিল। মায়ের গায়ে শুকনো কাপড় জড়িয়ে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা, সবাইকে খবর দেওয়া – সব ছেলে করে ছিল।
তবু শেষ রক্ষা হয় নি।
একটা অপরাধবোধে নিজেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলেছে।
মায়ের ডেডবডির সামনে ছেলের আকুতি – বলো মা বলো কেন আমাকে অপরাধী বানিয়ে চলে গেলে? ফিরে এসো মা।আর অবাধ্য হব না। একবার ফিরে এসো। মা —
এভাবে আগুনে পুড়ে মারা যাবে,মা ছেলে কারোর জানা ছিল না। চিতার সামনে ছেলে উন্মাদ কান্নার শব্দে মৃত মায়ের চোখটা যেন জলে চিকচিক করে উঠলো। কেউ যেন বলে উঠলো, আবার আসব ফিরে। একটু শুধু অপেক্ষা।

Loading

Leave A Comment